সতীদাহ প্রথা নিয়ে যবন ও নাস্তিকদের অপপ্রচারের যথাযথ জবাব || Hindu Consciousness || Sati

3 years ago
26

সতীদাহের মত ঘৃণ্য
প্রথা সমাজ
থেকে চলে গেছে বহু বছর
আগে কিন্তু এর ফলে বৈদিক
ধর্মের যে কলঙ্কময় অধ্যায়
সূচিত হয়েছিল তার কারন হিসেবে বলা যায় বহিরাগত
আরবদের আক্রমণ, ভারতবর্ষ
দখল ও ষড়যন্ত্রের
মাধ্যমে বৈদিক পণ্ডিতদের
হত্যা করে সমাজ
থেকে বৈদিক জ্ঞান শূন্য করে যে পৌরাণিক মূর্তি পূজার চর্চা আরম্ভ হয়
তাই শত ভাগ দায়ী। যার
ফলেই আব্রাহামিকরা তাদের
সম্প্রদায়ের বিস্তারের
সুযোগটি নেয়।

মধ্যযুগে যখন
ধর্মব্যবসায়ী এবং
বিদেশীদের
চক্রান্তে সনাতন
ধর্মালম্বীদের বেদজ্ঞান
হয়ে পড়েছিল অতি দুষ্প্রাপ্য তখন সমাজে অনুপ্রবেশ
করে সতীদাহ প্রথা নামক
ঘৃন্য প্রথা।এছাড়াও
বিধবা নারীদেরকেও পুনরায়
বিয়ের সুযোগ না থাকায়
অনেক নিপীড়িত হতে হয়,তারা যেন ছিল এক বোঝা।তবে রামমোহন রায়
এবং বিদ্যাসাগর দের মত
মহান ব্যক্তিত্বরা বেদ এর
মাধ্যমে এসব প্রথাকে ভুল
প্রমান করেন এবং হিন্দুসমাজ রক্ষা পায়
এক কলঙ্কজনক অধ্যায় থেকে। অধুনা কিছু নাস্তিক ও
অন্যান্য ধর্মালম্বীদের
মধ্যে কিছু কুচক্রী লোক বেদ
এর কিছু মন্ত্র এর রেফারেন্স দেয় সতীদাহ
প্রথা এর
পক্ষে হিসেবে দাবী করে। তারা অথর্ববেদ ১৮.১.১-২ এর
রেফারেন্স দেয়।মজার বিষয়
হল রেফারেন্সটা দেখলেই
বোঝা যায় যে তারা জীবনেও এই
মন্ত্রগুলো পড়ে দেখেনি,কিছু
নাস্তিকদের পেইজ থেকে কপি পেষ্ট
করেছে মাত্র।কারন
দেখা যায় যে ওই মন্ত্র দুইটি সতীদাহ
প্রথাকে সমর্থন
তো দুরে থাক,বরং স্বামীর
মৃত্যুর পর স্ত্রীর সুখী জীবন নিশ্চিত
করতে বলেছে এবং প্রয়োজনে পুনরায়
বিয়ে করার
অনুমতি দিয়েছে।দেখা যাক
বেদ এর মন্ত্রগুলো-

ইয়ং নারী পতি লোকং বৃণানা
নিপদ্যত উপত্ব্য মর্ন্ত্য
প্রেতম্।
ধর্মং পুরাণমনু
পালয়ন্তী তস্ম্যৈ প্রজাং
দ্রবিণং চেহ ধেহি।। (অথর্ববেদ ১৮.১.৩)

মর্ত্য-হে মনুষ্য,ইয়ং নারী-
এই স্ত্রী,পতিলোকম-
পতিলোককে অর্থাত্ বৈবাহিক
অবস্থাকে,বৃণনা-
কামনা করিয়া,প্রেতম-মৃত
পতির,অনু-পরে,উপ ত্বা- তোমার নিকট,নিপদ্যতে-
আসিতেছে,পুরাণম-
সনাতন,ধর্ম্মম-
ধর্মকে,পালয়ন্তী-পালন
করিয়া,তস্য-তাহার জন্য,ইহ-
এই লোকে,প্রজাম্- সন্তানকে,দ্রবিণং- এবং ধনকে,ধেহি-ধারন
করাও।

অর্থাৎ,হে মনুষ্য!এই
স্ত্রী পুনর্বিবাহের
আকাঙ্খা করিয়া মৃত পতির
পরে তোমার নিকট
আসিয়াছে।সে সনাতন
ধর্মকে পালন করিয়া যাতে সন্তানাদি এবং সুখভোগ করতে পারে।

এই বিষয়ে একই
ভাবে তৈত্তিরীয় আরণযক
৬.১.৩ এ বলা হয়েছ

ইয়ং নারী পতিলোকং বৃণানা
নিপদ্যত উপত্বা মর্ত্য
প্রেতম।
বিশ্বং পুরাণ মনু
পালয়ন্তী তস্যৈ প্রজাং
দ্রবিণং চেহ ধেহি।।

অর্থাৎ, হে মনুষ্য!মৃত পতির
এই স্ত্রী তোমার ভার্যা।
সে পতিগৃহ সুখের
কামনা করিয়া মৃত পতির
পরে তোমাকে প্রাপ্ত
হইয়াছে।কিরুপ ভাবে? অনাদি কাল হইতে সম্পূর্ন
স্ত্রী ধর্মকে পালন করিয়া।
সেই
পত্নীকে তুমি সন্তানাদি এবং
ধনসম্পত্তি সহ সুখ নিশ্চিত
কর।

পরের মন্ত্রটি দেখি

অথর্ববেদ ১৮.৩.২(এই
মন্ত্রটি ঋগবেদ ১০.১৮.৮ এ ও
আছে)

উদীষর্ব নার্ষ্যভি জীবলোকং
গতাসুমেতমুপশেষ এহি।
হস্তাগ্রাভস্য
দিধিষোস্তবেদং
পত্যুর্জনিত্বমভি সংবভূব।।
নারী-হে স্ত্রী!তুমি,এতত্ গতাসুম্-এই গতপ্রান পতির ,উপশেষে-শয়ন
করিয়া আছ(মায়া ধরে আছ)
,জীবলোকং অভি উদীর্থ-
(মায়া ত্যগ করে) বাস্তবতায়
ফিরে এস(জীবলোকে),তব- তোমার,হস্তগ্রাভস্য
দিধিষোঃ- পাণিগ্রহনকারী,পত্যুঃ-
পতির সঙ্গে,ইদং জনিত্বম-
আবার পত্নীত্ব,অভি সংবভুব-
সৃষ্টি হল

অর্থাৎ, হে নারী!মৃত পতির
শোকে অচল হয়ে লাভ কি?
বাস্তব জীবনে ফিরে এস।
পুনরায় তোমার
পাণিগ্রহনকারী পতির
সাথে তোমার আবার পত্নীত্ব তৈরী হবে।

সায়নভাষ্যে এই মন্ত্রের
অর্থ দেখা যায় এরকম-

“হে মৃতপতীর পত্নী!জীবিত
পুত্রপৌত্রের লোক অর্থাত্
গৃহের কামনা করে শোক ত্যগ
কর।মৃত পতির মায়া ত্যগ কর।
তোমার
পাণিগ্রহনকারী পতির স্ত্রী হইবার ইচ্ছায় তুমি নিশ্চিতরুপে অনুসরন
কর।

প্রায় একইভাবে তৈত্তিরীয়
আরন্যক এ বলা হয়েছে ৬.১.১৪
তে,

“হে নারী!তুমি এই মৃতপতির
মায়ায় আবদ্ধ হয়ে আছ।এই
মায়া ত্যগ কর।পুনরায়
পতি কামনা কর
এবং পাণিগ্রহনকারী
বিবাহের অভিশাষী এই পতিকে জায়াত্বের সহিত
প্রাপ্ত হও”

অর্থাত্ মন্ত্রদুটিতে সতীদাহ
প্রথার কোন কথাই নেই
বরং স্বামীমৃত্যুর পর
স্ত্রীকে শোকে মুহ্যমান
হয়ে না পড়ে শোকত্যগ
করে স্বাভাবিক জীবন শুরু করতে বলা হয়েছে এবং
প্রয়োজনে পুনরায় বিবাহ
করার অনুমতি দিয়েছে।

Loading comments...