বুদ্ধদেব ছন্দককে যে শাস্তি দিয়েছিলেন তার ফল কী হয়েছিল?

1 year ago
1

।। ব্রহ্মদন্ড ।।

বুদ্ধদেব যেদিন গৃহত্যাগ করেন সেদিন রাজপ্রাসাদ থেকে বেশ কিছুদূর পর্যন্ত তিনি এসেছিলেন তাঁর রাজরথে।এই রথের সারথি ছিলেন ছন্দক।অনোমা নদীতীরে এসে সিদ্ধার্থ রথ থেকে অবতরন করেন ও ছন্দককে রথ সহ প্রাসাদে ফিরে যেতে বলেন।ছন্দক(পালি ভাষায় ছন্ন) তাঁর অনুগামী হবার অনেক প্রার্থনা জানায়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিদ্ধার্থের আদেশ মতো তাকে প্রাসাদে ফিরতে হয়।সে ই সিদ্ধার্থের গৃহত্যাগের কথা সকলকে জানায়।

পরে কিন্তু ছন্দক ভিক্ষুসংঘে যোগ দেয়।সম্ভবত বুদ্ধদেব যখন পিতৃঅনুরোধে বোধি লাভের পর একবার কপিলাবস্তুতে যান,তখন বহু শাক্যের সঙ্গে সেও বৌদ্ধ ধর্ম গ্ৰহণ করে সংঘে যোগ দেয়।এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ই আছে।সমস্যার শুরু এরপরে।ছন্দক ছিলেন অবাধ্য, অহংকারী,উন্মার্গগামী।অন্য অনেক কে তো বটেই, এমনকি বুদ্ধের দুই অগ্ৰশ্রাবক সারিপুত্ত ও মৌদগল্লায়নের প্রতিও সে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। তাঁদের নিন্দা করে। যথারীতি তাকে বহিস্কার করা হয়। কিন্তু বহু কাকুতি মিনতি করে সে আবার সংগে প্রবেশ করে।যদিও কিছুদিনের মধ্যেই বোঝা যায় তার স্বভাবের পরিবর্তন হয়নি। সে নিজমূর্তি ধারণ করে পুনরায়।এই অবস্থায় বুদ্ধদেব আনন্দকে নির্দেশ দেন, তাঁর মহাপরিনির্বাণ এর পর যেন ছন্দককে 'ব্রহ্মদন্ড'দেওয়া হয়।(সম্ভবত এই নির্দেশ তিনি মহাপরিনির্বাণের অল্প কিছু আগেই দিয়েছিলেন)।

আনন্দ এই দন্ডের কথা আগে শোনেন নি। তাই প্রশ্ন করাতে বুদ্ধদেব যা বলেন তার অর্থ করলে এইরকম হয় যে "আনন্দ, ভিক্ষু ছন্ন যাকে যা ইচ্ছে বলুক, ভিক্ষুরা যেন তার সঙ্গে বাক্যালাপ না করে,তারা তাকে উপদেশও দেবে না বা তাকে অনুশাসনও করবে না"।এটাই ব্রহ্মদন্ড।

এই দন্ড দানের ফলে শেষ পর্যন্ত ছন্দক নিজে ভুল বুঝতে পারেন। একাকী ও নিঃসঙ্গ ছন্দক নিজেকে সংশোধন করেন এবং অর্হত্ব লাভ করেন।

----------------------------------------------

এখন আসি দন্ডটির প্রসঙ্গে। উল্লেখিত ঘটনা থেকে বোঝা যায় যে মানুষকে উপেক্ষা করা, বিশেষ করে তাকে নিঃসঙ্গ করে দেওয়া,একা থাকতে বাধ্য করা তার মনের উপরে কি বিপুল পরিমাণে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। যে ছন্দককে বহিষ্কার দণ্ড দিয়েও স্বভাবের পরিবর্তন আনা যায়নি এই দন্ড তাকে সেই পরিবর্তনে বাধ্য করে।

মানুষ বিবর্তনের নিয়মে সমাজবদ্ধ জীব।ফলে মানুষের শারীরবৃত্তীয় গঠনও বোধহয় এইরূপ যে অন্য মানুষের সংস্রব মানুষকে শরীর ও মনে সুস্থ রাখে।এই ধরনের দন্ড সেই সুস্থতার বোধটিকেই মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নেয়। মানুষের কাছে যন্ত্রণার এই বোধ যন্ত্রণামুক্তির উপায়ের খোঁজও করাতে শুরু করে।আর সেই খোঁজই তাকে পৌঁছে দেয় চিত্তশুদ্ধিতে।

Loading comments...