ll সিলারিগাঁও ভ্রমণ ll দার্জিলিং ll কালিম্পং ll Trip to Silarigaon in 2021 ll

3 years ago
1

ছুটি পেয়েছেন? ভাবছেন এই গরমে একটু নিরিবিলিতে ঘুরে আসবেন? তাহলে চলে যেতে পারেন সিলারিগাঁও। অল্পদিনের ভ্রমণে অল্প স্বল্প ট্রেকিং, হেঁটে পাহাড়ি চড়াই-উতরাইয়ের পথে নৈসর্গিক সৌন্দর্য। কালিম্পং পাহাড়ের অপূর্ব ঠিকানা সিলারিগাঁও। সঙ্গে থাকবে কাঞ্চনজঙ্ঘা ও তিস্তা। ৬০০০ ফিট উপরে হিমালয়ের কোলে এই পাহাড়ি গ্রাম। শিলিগুড়ি থেকে ৯২ কিমি দূরের এই গ্রাম চারিদিকে লম্বা পাইন গাছ দিয়ে ঘেরা। ভালোবেসে অনেকে বলে নিউ দার্জিলিং। ‘সিলারি’ নামটি এসেছে স্থানীয় গাছের নাম অনুসারে আর গাঁও-এর অর্থ গ্রাম অথবা নদীর পাশে বেড়ে ওঠা বসতি।
কী ভাবে যাবেন:- শিয়ালদহ বা হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি। আর প্লেনে গেলে যাবেন বাগডোগরা বিমানবন্দরে। এনজিপি থেকে গাড়ি ভাড়া করে সিলারিগাঁও। দূরত্ব ৯৫ কিলোমিটার। অন্যস্থানগুলি দেখার জন্য পাবেন ভাড়া গাড়ি। রিকিসাম থেকে আলগাড়াবাজার হয়ে পেডিং-রেশি রোড ধরে চুমিরচেন থেকে বাঁহাতেই সিলারি রোড। পেডিং থেকে এর দূরত্ব ১৫ কিমি। কালিম্পং থেকে ভায়া আলগাড়া দূরত্ব ২০ কিমি। রিকিসাম থেকে সিলারির দূরত্ব প্রায় ২০ কিমি।
এছাড়া আছে সিঙ্কনা প্লান্টিং যা শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ সময়কাল থেকে ম্যালেরিয়ার ওষুধ তৈরির জন্য। এছাড়া ছোট খাটো ট্রেকিং এর অ্যাডভেঞ্চার উপভোগ করার জন্য যেতে পারেন তিন চুল্লি, রেমিটি। তিন চুল্লি থেকে দেখতে পাবেন সিকিম শহর, জিপলা, নাথুলা, কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং তিস্তার চারটি বাঁক। সিলারিগাঁও থেকে ৪ কিমি দূরত্বে ইতিহাসের খোঁজে যেতে পারেন দামসাং দূর্গ। ১৬৯০ সালে স্থানীয় লেপচা রাজাদের তৈরি এই দূর্গ ১৮৬৪ সালে অ্যাংলো-ভুটান যুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সেনার দ্বারা ধ্বংস হয়ে যায়। এখন শুধু পরে আছে তারই কিছু ধ্বংসাবশেষ আর নিস্তব্ধতা। ধ্বংসস্তূপের সামনে বসে নিরিবিলিতে বেড়ে ওঠা বড় ঘাসের জঙ্গলের হাঁটতে হাঁটতে অনুভব করা যায় সেই সময় কে।
সিলারিগাঁও থেকে এবার গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন পেডোং, রেসিং ও আরিতার দিকে। দেখা পাবেন ৩০০ বছর পুরোনো বৌদ্ধ মনেসট্রি। প্রাচীন মনেস্ট্রির দেওয়ালে দেখা পাওয়া যায় বৌদ্ধ তান্ত্রিকদের আঁকা ছবি । এপ্রিল-মে মাসে এই খানে ঘুরতে গেলে দেখতে পাবেন বৌদ্ধ লোকায়ত ডান্স চ্যাং। তার পরে চলে যান ঋষি রোডের ও সিলারিগাঁও এর কাছে অবস্থিত ক্রস হিল দেখতে। ১৮৮২ সালে ফাদার অগাস্টিন এটি তৈরি করেছিলেন। তিব্বতে খ্রিষ্টধর্ম প্রচারের জন্য অনেক ধর্মগুরু আসতেন। তারা তিব্বতে খ্রিষ্টধর্ম প্রচারের জন্য বিভিন্ন প্রান্তে গিয়েছিলেন কিন্তু আর ফিরে আসেননি। ফাদার অগাস্টিন বিশ্বাস করতেন সেই সব পবিত্র মানুষ একদিন ফিরে আসবেন এবং তারা যাতে ওই অঞ্চলকে চিনতে পারেন তার জন্য তিব্বতের দিকে মুখ করা যিশুর ক্রসবিদ্ধ মূর্তিটি তৈরি করেছিলেন।
এখান থেকে পর্বতমালার এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়। এছাড়া এখান থেকে দেখতে পাবেন সূর্যাস্তের অনুপম দৃশ্য। এখান থেকে ২ কিমির মধ্যে পেডিং বাজারের কাছে রয়েছে কার্গিল যুদ্ধে শহীদ হওয়া এক ভারতীয় সেনার স্মরণে তৈরি ‘শহীদ পার্ক’। আশে পাশে আছে আরও দর্শনীয় স্থান। যেমন- রিকিসাম, ঋষি ব্রিজ, আরিতা লেক, মাকিম, রংগপো খোলার মত রোমান্টিক মনোরম জায়গাগুলো। দেখতে পাবেন পাহাড়ে পাহাড়ে খেলা করা রামধনু, নাম না জানা চেনা অচেনা পাখিদের ভীড় ও তাদের কোলাহল। আরিতার লেকে করতে পারেন নৌকাবিহার। যারা হস্তশিল্প নিয়ে চর্চা করতে ভালবাসেন তারা যেতে পারেন ৩০০ বছরের পুরোন লেপচা হস্তশিল্পীদের বাড়িতে। সারা বছর যেতে পারেন এই জায়গায় কিন্তু শীতকাল উপযুক্ত সময়। কারণ তখন দেখতে পাবেন পরিষ্কার মেঘমুক্ত আকাশে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে।

Loading comments...